ইয়া নবী সালামু আলাইকা
কবি গোলাম মোস্তফাইয়া নবী সালামু আলাইকা
ইয়া রাসুল সালামু আলাইকা
ইয়া হাবীব সালামু আলাইকা
সালাওয়া তুল্লা আলাইকা।।
তুমি যে নূরের নবী
নিখিলের ধ্যানের ছবি
তুমি না এলে দুনিয়ায়
আঁধারে ডুবিত সবি ।।
সূরা ফাতিহা অবলম্বনে কবি গোলাম মোস্তফার রচিত কবিতা
"অনন্ত অসীম প্রেমময় তুমি বিচার দিনের স্বামী
যতো গুনগান হে চির মহান তোমারই অন্তর্যামী।"
১৩ অক্টোবর কবি গোলাম মোস্তফার মৃত্যুবার্ষিকী।
বাংলা সাহিত্যের আকাশে উজ্জ্বল নক্ষত্র, ইসলামী জাগরণের কবি, বহুমুখী প্রতিভাবান ব্যক্তিত্ব গোলাম মোস্তফা (জন্মঃ ১৮৯৭ - মৃত্যুঃ ১৩ অক্টোবর ১৯৬৪)।
গোলাম মোস্তফার জন্ম ১৮৯৭ সালে যশোর জেলার ঝিনাইদহ মহকুমার শৈলকূপা থানার অন্তর্গত মনোহরপুর গ্রামে। পিতা কাজী গোলাম রব্বানী, পিতামহ কাজী গোলাম সরওয়ার। তারা ছিলেন সাহিত্যানুরাগী-ফারসী ও আরবী ভাষায় সুপন্ডিত।
গোলাম মোস্তফা ১৯১৬ সালে তিনি দৌলতপুর বি. এল কলেজ থেকে আই. এ এবং ১৯১৮ সালে কলকাতা রিপন কলেজ থেকে বি. এ পাশ করেন। পরে ডেভিড হেয়ার ট্রেনিং কলেজ থেকে বি. টি ডিগ্রীও লাভ করেন।
দীর্ঘ ত্রিশ বছর শিক্ষকতা করার পর ১৯৫০ সালে তিনি চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করেন।
বাংলা সাহিত্যের সাধক কবি গোলাম মোস্তফা তার শেষ জীবনের কয়েক বছর ঢাকা শান্তিনগরস্থ নিজ গৃহে (মোস্তফা মঞ্জিল) অতিবাহিত করেন। বেশ কিছু দিন রোগ যন্ত্রণা ভোগ করার পর কবি ১৯৬৪ সালের ১৩ অক্টোবর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
গোলাম মোস্তফার তিন পুত্রের মাঝে একজন হলেন বিখ্যাত পাপেটনির্মাতা ও চিত্রশিল্পী মুস্তফা মনোয়ার। সাম্প্রতিককালের অস্কারজয়ী বাংলাদেশী নাফিস বিন জাফর গোলাম মোস্তফার নাতি।
তার কাব্যের মূল বিষয় ছিল ইসলাম ও প্রেম। তার প্রথম কাব্য গ্রন্থ ‘রক্ত রাগ’ প্রকাশিত হলে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নিচের দু’লাইন কবিতার মাধ্যমে কবিকে অভিনন্দিত করেছিলেন-
“তব নব প্রভাতের রক্তরাগখানি
মধ্যাহ্নে জাগায় যেন জ্যোতির্ময়ী বাণী।”
তাঁর পরবর্তী গ্রন্থাবলীর মধ্যে "হাসনাহেনা" (কাব্যগ্রন্থ) "খোশরোজ" (কাব্যগ্রন্থ), "সাহারা (কাব্যগ্রন্থ)’, "বুলবুলিস্তান" (কাব্যচয়ন) ও ‘রূপের নেশা’ "ভাঙ্গাবুক" ‘একমন একপ্রাণ’ ইত্যাদি উপন্যাসগুলি বিশেষ আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল।
অনুবাদক হিসেবেও কবি গোলাম মোস্তফার বিশেষ খ্যাতির পরিচয় পাওয়া যায়। আরবী ও উর্দু সাহিত্য হতে নিম্নলিখিত গ্রন্থগুলি ভাষান্তরিত করে বাংলা সাহিত্যকে তিনি সমৃদ্ধ করেছেন। "ইখওয়ানুস সাফা", ‘মুসাদ্দাস-ই-হালী’,- "কালাম-ই-ইকবাল" ‘শিকওয়া’ ও "আল-কুরআন" তার ভাষান্তরিত গ্রন্থগুলির অন্যতম। এছাড়া, চিন্তামূলক ও যুক্তিবাদের উপর লিখিত আরও কিছু গ্রন্থাবলী তিনি রচনা করেছিলেন। "ইসলাম ও কমিউনিজম’, "ইসলামে জেহাদ", "আমার চিন্তাধারা", এগুলি তার গভীর চিন্তাধারার জ্ঞানলব্ধতার ফসল।
কবি গোলাম মোস্তফার "বিশ্বনবী" একটি আশ্চর্য রকমের সফল সৃষ্টি। এই অমর গ্রন্থখানি গদ্যে রচিত হলেও সে গদ্যও কবিতার মত ছন্দময় এবং মধুর। গ্রন্থখানা বিশ্বনবী হয়রত মুহম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর একটি সার্থক জীবন চরিত। তিনি বনি আদম’ নামে একটি মহাকাব্য লিখেছিলেন। যা বাংলা সাহিত্যে এক অমর ও অক্ষয় কীর্তি।
গায়ক ও গীতিকার হিসেবে তিনি বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। বিশেষ করে ইসলামী গান, গজল ও মিলাদ মাহফিলের বিখ্যাত ‘কিয়ামবাণী’ (রসুলকে সালাম পেশের বাণী) রচনায় তিনি ছিলেন অদ্বিতীয়। তার অনেকগুলি গান আব্বাস উদ্দীনের কণ্ঠেও রেকর্ড হয়েছিল। এছাড়া নিজের কণ্ঠেও তিনি বেশ কয়েকটি গান রেকর্ড করেছিলেন।
কোন মন্তব্য নেই: