বাংলাদেশের রণ সংগীত কোনটি ও এর রচয়িতা কে?
প্রায় প্রতিটি দেশের সশস্ত্র বাহিনী ও অন্যান্য বাহিনীর একটি করে মার্চিং সং বা মার্চিং টিউন, অর্থাৎ রণসংগীত থাকে। এই সংগীত বা টিউন যুদ্ধক্ষেত্রে সৈনিকদের মধ্যে দেশাত্মবোধ, উদ্দীপনা, আত্মোৎসর্গ করার প্রেরণা ইত্যাদি জাগিয়ে তোলে এবং তাদের জীবন বাজি রেখে দেশের জন্য যুদ্ধ করতে উৎসাহিত করে। এই ধরনের সংগীত সৈনিকদের মধ্যেই শুধু নয়, দেশের আপামর জনতার মধ্যেও দেশপ্রেম ও জাতীয়তাবোধ জাগিয়ে তোলে।
বিখ্যাত উর্দু কবি ইকবালের ‘সারা জাঁহাসে আচ্ছা, হিন্দুস্তাঁ হাঁমারা’ কবিতাটি ব্রিটিশ আমলে জাতিধর্ম-নির্বিশেষে ভারতবাসীকে স্বদেশপ্রেমের অনুপ্রেরণা জোগাত। ভারত স্বাধীন হওয়ার পর কবিতাটি ভারতের সম্মিলিত বাহিনীর রণসংগীতের মর্যাদা পায়। এই রণসংগীতকে সামরিক ব্যান্ডে সুরারোপ করেন প্রফেসর এ লবো। আমেরিকার সেনাবাহিনী ১৯৫৬ সাল থেকে ‘আর্মি গোজ রোলিং এলং’কে রণসংগীতের মর্যাদা দিয়েছে। এই রণসংগীতের লেখক ছিলেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এডমন্ড এল গ্রাবার, এতে সুর দিয়েছেন বিখ্যাত সুরকার ব্যান্ড মাস্টার জন ফিলিপ সুউসা।
বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে নজরুলের আগে রণসংগীতের দেখা যায় না। এ বিষয়ে নজরুল-গবেষক বাঁধন সেনগুপ্ত বলেছেন, ‘বাংলায় যুদ্ধবিষয়ক কবিতা খুব কম। যে কটি কবিতা এ পর্যন্ত রচিত হয়েছে সমরসংগীত (March Song) তার মধ্যে সুর, বাণী ও ভাবের বিচারে প্রথম শ্রেণীর রচনা বলেই বিবেচিত। বাংলা কবিতায় একমাত্র এ ধরনের যুদ্ধবিষয়ক গানের প্রবর্তক হিসেবেই নজরুল অমর হয়ে থাকবেন। (নজরুল কাব্যগীতি: বৈচিত্র্য ও মূল্যায়ন, পৃষ্ঠা ৮৫)।’
পল্টনে থাকা অবস্থাতেই নজরুল সামরিক জীবনের বিভিন্ন বিষয়কে কাব্যছন্দে রূপান্তরিত করতেন বলে সুবেদার মনবাহাদুর উল্লেখ করেছেন: ‘আমাদের সৈনিক কবি হাবিলদার কাজী নজরুল ইসলামকে দেখতাম—অবসর সময় সৈনিকজীবনের সকল রকম ছন্দকে তিনি কাব্যছন্দে রূপান্তরিত করছেন।’
কাজী নজরুল ইসলাম সৈনিক হিসেবেই বিভিন্ন ধরনের মার্চিং সং বা টিউন চর্চা করতেন বলে জমাদার শম্ভু রায়ও উল্লেখ করেছেন।
নজরুলের রণসংগীতের আবেদন বা প্রভাব সম্পর্কে সৈনিক মাহবুব-উল-আলম লিখেছেন, ‘তার [নজরুলের] তিনটা দান অসাধারণ। সৈনিকজীবনের ঠিক রসটি তিনি ধর্তে পেরেছেন। তার প্রমাণ: তাঁর “চল্ চল্ চল্” মার্চিং সং। পাঞ্জাবীদের সামরিক খ্যাতি প্রায় দু’হাজার বৎসরের। কিন্তু, তাদের নিজস্ব কোন “মার্চিং সং” গড়ে উঠেনি। বৃটিশ আমলে বৃটিশ “মার্চিং সং” গেয়ে ওদের কেটেছে। কিন্তু পাকিস্তানী আমলে নজরুলের গান ওদের এমনভাবে নাড়া দেয় যে ওটার ইংরেজী অনুবাদকে টিউন করে পাকিস্তানের প্রথম নিজস্ব “মার্চিং সং” রূপে চালু করে।’
১৯৯৬ সালের ৫ ডিসেম্বের নজরুলের ‘চল্ চল্ চল্’ সংগীতকে বাংলাদেশ পদাতিক বাহিনীর রণসংগীত হিসেবে প্রচলন করা হয়। এই গানে সুরারোপ করেছিলেন কাজী নজরুল ইসলাম নিজেই। সামরিক ব্যান্ডে কম্পোজ করেন সুবেদার মেজর বাশার। এই রচনা সম্পর্কে ভূপেন্দ্রকিশোর রক্ষিত রায় বলেন-
বাংলা ভাষায় সামরিক পদ্ধতিতে “চলার সঙ্গীত” ছিল না। নজরুল দিলেন সে সঙ্গীত: অভিযাত্রীর পদছন্দে:
চল্ চল্ চল্!/ ঊর্ধ্ব গগনে বাজে মাদল
নিম্নে উতলা ধরণী-তল,/ অরুণ প্রাতের তরুণ দল—’
নজরুলের রণসংগীত সুভাষ বসুকেও নাড়া দেয়। তিনি উল্লেখ করেছিলেন যে, এই সংগীত গাইতে গাইতে তাঁর বিপ্লবী সেনাদল যুদ্ধের ময়দানে এগিয়ে যাবে।
" চল্ চল্ চল্" বা "নতুনের গান" মনে হয় যেন দুটি গান, শুরু থেকে ‘মৃত্যু-তোরণ-দুয়ারে-দুয়ারে/ জীবনের আহ্বান’ পর্যন্ত একটি এবং ‘ঊর্ধ্বে আদেশ হানিছে বাজ’ থেকে ‘আমরা গড়িব নতুন করিয়া/ ধুলায় তাজমহল’ আর একটি। এ জন্যই বোধ হয় গানটির প্রথমাংশ সাধারণত গীত হয়ে থাকে।’
কাজী নজরুল ইসলাম বাংলাদেশের রণ সংগীতের একজন অমূল্য রত্ন এবং কবি হিসেবে প্রসিদ্ধ। তিনি বিশেষভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়ে রচিত কবিতা এবং গানের মাধ্যমে সংগীত ক্ষেত্রে মহৎ অবদান রেখেছেন।
কাজী নজরুল ইসলামের রণ সংগীত ভাষায় উপস্থাপনা করা কঠিন, উদার, এবং উদ্দীপক। তার কবিতা এবং গানে পাত্র হয়ে যায় প্রশ্ন, উৎসাহ, মর্মান্তিকতা, এবং প্রবীণতা। এটি সাধারণভাবে তার রণ সংগীতের রূপকে বিবরণ করতে ব্যাপক, দুটি প্রস্তুত রকম রণ সংগীতের মধ্যে পরিচিত হয়েছে:
স্বাধীনতা যুদ্ধের কবিতা ও গান
কাজী নজরুল ইসলাম স্বাধীনতা যুদ্ধে অবদান রেখেছিলেন এবং তার কবিতা এবং গানে স্বাধীনতা সংগ্রামের উৎসাহ, মর্মান্তিকতা, এবং গর্ব প্রকাশ করে।
"বিজয় বিক্রম" একটি অমূল্য গান, যা স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়ে রচিত হয়েছে এবং তার ভাষা একটি সাহিত্যিক স্মৃতি হিসেবে অধিক প্রসিদ্ধ।
আধুনিক যুদ্ধ কবিতা ও ্মানঃ
তার পরবর্তী জীবনে, কাজী নজরুল ইসলাম আবারও আধুনিক যুদ্ধের সময়ে কবিতা এবং গান রচনা করেন।
"কবিতা ও গানে প্রশ্ন করি যুদ্ধের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের প্রতি তার দুঃখ, ভালোবাসা, এবং উৎসাহ ব্যক্ত করতে।
কাজী নজরুল ইসলামের রণ সংগীত দীর্ঘকাল ধরে তার সাহিত্যিক ও সংগীতশৈলীতে অপূর্ব একটি অংশ হিসেবে মোকাবিলা করে এবং তিনি আজও সম্প্রতি বাংলা ভাষার অভিজ্ঞানের অংশ হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে থাকে।
কোন মন্তব্য নেই: