দুলিতেছে তরী, ফুলিতেছে জল, "কান্ডারী হুঁশিয়ার" ! উৎসঃ কাজী নজরুল ইসলামের 'সর্বহারা' কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে। এটি নজরুল ইসলামের লেখা একটি অন্যতম জনপ্রিয় কবিতা। অখণ্ড ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে লেখা এই কবিতায় কবি ভারতের যুব সমাজ ও স্বাধীনতা সংগ্রামের নেতৃত্বের কাছে একটি স্পষ্ট বার্তা দিতে চেয়েছেন।
কান্ডারি হুশিয়ার
পরাধীন জাতির কাছে স্বাধীনতাই যখন সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য, সেই সময়েও কিছু স্বার্থান্বষী মানুষ হিন্দু-মুসলিম বিভেদ সৃষ্টির মাধ্যমে সমাজকে দু টুকরো করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। চারিদিকে যখন চরম প্রতিকূল অবস্থা, সেই সময় সাম্প্রদায়িক বিভেদ, হানাহানি ও দাঙ্গার ফলে স্বাধীনতা সংগ্রামের পথ আরও কঠিন হয়ে পড়ে। তাই এ হেন পরিস্থিতিতে সংগ্রামী যুবসমাজের প্রতি কবির আহ্বান: “কে আছ জোয়ান হও আগুয়ান হাঁকিছে ভবিষ্যৎ।”
কান্ডারী হুঁশিয়ার
কথা ও সুরঃ কাজী নজরুল ইসলাম
দুর্গম গিরি, কান্তার-মরু, দুস্তর পারাবার
লঙ্ঘিতে হবে রাত্রি-নিশীথে, যাত্রীরা হুশিয়ার!
দুলিতেছে তরি, ফুলিতেছে জল, ভুলিতেছে মাঝি পথ,
ছিঁড়িয়াছে পাল, কে ধরিবে হাল, আছে কার হিম্মৎ?
কে আছ জোয়ান হও আগুয়ান হাঁকিছে ভবিষ্যৎ।
এ তুফান-ভারী-দিতে হবে-পাড়ি-নিতে হবে-তরী পার।
তিমির রাত্রি, মাতৃমন্ত্রী সান্ত্রীরা সাবধান!
যুগ-যুগান্ত সঞ্চিত ব্যথা ঘোষিয়াছে অভিযান।
ফেনাইয়া উঠে বঞ্চিত বুকে পুঞ্জিত অভিমান,
ইহাদের-পথে নিতে-হবে সাথে-দিতে হবে-অধিকার।
অসহায় জাতি মরিছে ডুবিয়া, জানে না সন্তরন
কান্ডারী! আজ দেখিব তোমার মাতৃমুক্তি পন।
হিন্দু না ওরা মুসলিম? ওই জিজ্ঞাসে কোন জন?
কান্ডারী! বল, ডুবিছে মানুষ, সন্তান মোর মার
গিরি সংকট, ভীরু যাত্রীরা গুরু গরজায় বাজ,
পশ্চাৎ-পথ-যাত্রীর মনে সন্দেহ জাগে আজ!
কান্ডারী! তুমি ভুলিবে কি পথ? ত্যজিবে কি পথ-মাঝ?
করে হানাহানি, তবু চলো টানি, নিয়াছ যে মহাভার!
কান্ডারী! তব সম্মুখে ঐ পলাশীর প্রান্তর,
বাঙালীর খুনে লাল হল যেথা ক্লাইভের খঞ্জর!
ঐ গঙ্গায় ডুবিয়াছে হায়, ভারতের দিবাকর!
উদিবে সে রবি আমাদেরি খুনে রাঙিয়া পূনর্বার।
ফাঁসির মঞ্চে গেয়ে গেল যারা জীবনের জয়গান,
আসি অলক্ষ্যে দাঁড়ায়েছে তারা, দিবে কোন্ বলিদান
আজি পরীক্ষা, জাতির অথবা জাতের করিবে ত্রাণ?
দুলিতেছে তরী, ফুলিতেছে জল, কান্ডারী হুশিয়ার!
কোন মন্তব্য নেই: