কৃষকের ঈদ আনন্দ- krishoker eid kobita

কৃষকের ঈদ আনন্দ" কবিতাটি লিখেছেন বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম। 


কৃষকের ঈদ আনন্দ- krishoker eid kobita

কৃষকের ঈদ আনন্দ


বেলাল! বেলাল! হেলাল উঠেছে পশ্চিমে আশমানে,

লুকাইয়া আছ লজ্জায় কোন মরুর গোরস্তানে!
হেরো ঈদ্গাহে চলিছে কৃষক যেন প্রেত-কঙ্কাল
কশাইখানায় যাইতে দেখেছ শীর্ণ গোরুর পাল?
রোজা এফতার করেছে কৃষক অশ্রু-সলিলে হায়,
বেলাল! তোমার কন্ঠে বুঝি গো আজান থামিয়া যায়!
থালা ঘটি-বাটি বাঁধা-দিয়ে হেরো-চলিয়াছে-ঈদ্গাহে,
তির-খাওয়া বুক, ঋণে-বাঁধা-শির, লুটাতে খোদার রাহে।

জীবনে-যাদের-হররোজ-রোজা-ক্ষুধায়-আসে না-নিদ
মুমূর্ষু সেই কৃষকের ঘরে এসেছে কি আজ ঈদ?
একটি বিন্দু-দুধ নাহি-পেয়ে-যে খোকা-মরিল-তার
উঠেছে ঈদের চাঁদ হয়ে কি সে শিশু-পাঁজরের হাড়?
আশমান-জোড়া কাল কাফনের আবরণ যেন টুটে
এক ফালি-চাঁদ-ফুটে-আছে-মৃত-শিশুর-অধর-পুটে।
কৃষকের ঈদ! ঈদ্গাহে চলে জানাজা পড়িতে তার,
যত তকবির শোনে, বুকে তার তত উঠে হাহাকার!
মরিয়াছে খোকা, কন্যা মরিছে, মৃত্যু-বন্যা আসে
এজিদের সেনা ঘুরিছে মক্কা-মসজিদে আশেপাশে।
কোথায় ইমাম? কোন সে খোৎবা পড়িবে আজিকে ঈদে?
চারিদিকে-তব-মুর্দার লাশ-তারই মাঝে-চোখে বিঁধে
জরির পোশাকে শরীর ঢাকিয়া ধনীরা এসেছে সেথা,
এই-ঈদ্গাহে-তুমি কি-ইমাম-তুমি কি-এদেরই-নেতা?
নিঙাড়ি কোরান হাদিস ও ফেকা, এই মৃতদের মুখে
অমৃত কখনও দিয়াছ কি তুমি? হাত দিয়ে বলো বুকে।
নামাজ পড়েছ, পড়েছ কোরান, রোজাও রেখেছ জানি,
হায় তোতাপাখি! শক্তি দিতে কি পেরেছ একটুখানি?
ফল বহিয়াছ, পাওনিকো রস, হায় রে ফলের ঝুড়ি,
লক্ষ বছর ঝরনায় ডুবে রস পায় নাকো নুড়ি!

আল্লা-তত্ত্ব জেনেছ কি, যিনি সর্বশক্তিমান?
শক্তি-পেল না-জীবনে যে-জন-সে নহে-মুসলমান!
ইমান! ইমান! বলো রাতদিন, ইমান কি এত সোজা?
ইমানদার হইয়া কি কেহ বহে শয়তানি বোঝা?
শোনো মিথ্যুক! এই দুনিয়ায় পূর্ণ যার ইমান,
শক্তিধর সে টলাইতে পারে ইঙ্গিতে আশমান!
আল্লার নাম লইয়াছ শুধু, বোঝোনিকো আল্লারে।
নিজ-যে-অন্ধ সে-কি অন্যেরে-আলোকে-লইতে-পারে?
নিজে-যে স্বাধীন-হইল না-সে স্বাধীনতা-দেবে-কাকে?
মধু-দেবে-সে কি-মানুষ-যাহার-মধু নাই-মৌচাকে?

কোথা সে শক্তি-সিদ্ধ ইমাম, প্রতি পদাঘাতে যার
আবে-জমজম শক্তি-উৎস বাহিরায় অনিবার?
আপনি-শক্তি-লভেনি-যে জন-হায় সে-শক্তিহীন
হয়েছে ইমাম, তাহারই খোৎবা শুনিতেছি নিশিদিন!
দীন-কাঙালের-ঘরে ঘরে-আজ দেবে-যে নব-তাকিদ
কোথা সে মহান শক্তি-সাধক আনিবে যে পুন ঈদ?
ছিনিয়া আনিবে আশমান থেকে ঈদের চাঁদের হাসি
ফুরাবে-না কভু-যে হাসি-জীবনে-কখনও-হবে না-বাসি!
সমাধির মাঝে গণিতেছি দিন, আসিবেন তিনি কবে?
রোজা এফতার করিব সকলে, সেই দিন ঈদ হবে।

কোন মন্তব্য নেই:

Blogger দ্বারা পরিচালিত.