লতা মঙ্গেশকর
লতা মঙ্গেশকর এর পরিচয়ঃ
লতা মঙ্গেশকর ১৯২৯ সালের ২৮শে সেপ্টেম্বর তৎকালীন ইন্দোর রাজ্যের রাজধানী ইন্দোর (বর্তমান মধ্যপ্রদেশ) জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা পণ্ডিত দীনানাথ মঙ্গেশকর একজন মারাঠি ও কোঙ্কিণী সঙ্গীতজ্ঞ এবং মঞ্চ অভিনেতা ছিলেন। তার মাতা সেবন্তী (পরবর্তী নাম পরিবর্তন করে সুধামতি রাখেন) বোম্বে প্রেসিডেন্সির তালনারের (বর্তমান উত্তর-পশ্চিম মহারাষ্ট্র) একজন গুজরাতি নারী ছিলেন। তিনি দীনানাথের দ্বিতীয় স্ত্রী ছিলেন। তার প্রথম স্ত্রী নর্মদা সেবন্তীর বড়বোন ছিলেন, যিনি মৃত্যুবরণ করেছিলেন।
শৈশবে বাড়িতে থাকাকালীন কে এল সায়গল ছাড়া আর কিছু গাইবার অনুমতি ছিল না তার। বাবা চাইতেন ও শুধু ধ্রপদী গান নিয়েই থাকুক। জীবনে প্রথম রেডিও কেনার সামর্থ্য যখন হলো, তখন তার বয়স আঠারো। কিন্তু রেডিওটা কেনার পর নব ঘুরাতেই প্রথম যে খবরটি তাকে শুনতে হয় তা হচ্ছে, কে. এল. সায়গল আর বেঁচে নেই। সঙ্গে সঙ্গেই রেডিওটা ফেরত দিয়ে দেন তিনি। ৫ বছর বয়সে বাবার পরিচালিত গীতি-নাট্যে অভিনয় করেন। ১৯৪১ সালে রেডিওতে দুটি গান রেকর্ড করেন, বাবার মৃত্যুর পর পেশা জীবনে পা রাখেন। ১৩ বছর বয়সে মারাঠি গানের রেকর্ড হয়, কিন্তু সে গান সিনেমা থেকে বাদ যায়। তাঁর প্রথম হিন্দি গান মারাঠি 'জগভাউ' নামক ছবিতে। হিন্দি চলচ্চিত্র 'আপ কি সেবা মে' প্রথম হিন্দি গান গেয়েছেন তিনি। তারপর ১৯৪৮এ প্রযোজক শশধর মুখোপাধ্যায়-এর ছবি 'শহিদ' ছবিতে তিনি সুযোগ পান এবং মজবুর সিনেমায় 'দিল মেরা তোড়া' গানে তিনি বিশেষ জনপ্রিয়তা পান।
এক নজরে লতা মঙ্গেশকরঃ
নাম (Name) | লতা মঙ্গেশকর (Lata Mangeshkar) | ||||||||||||||||
জন্ম (Birthday) | ২৮ সেপ্টেম্বর ১৯২৯ (28th September 1929) | ||||||||||||||||
জন্মস্থান (Birthplace) | ইন্দোর, ব্রিটিশ ভারত (মধ্যপ্রদেশ) | ||||||||||||||||
অভিভাবক (Parents)/পিতামাতা | দ্বীননাথ মঙ্গেশকর
শিবন্তী মঙ্গেশকর |
||||||||||||||||
কর্মজীবন | ১৯৪২ – বর্তমান | ||||||||||||||||
উল্লেখযোগ্য পুরস্কার |
|
||||||||||||||||
ধরন | মারাঠি চলচ্চিত্রের গান | ||||||||||||||||
বাদ্যযন্ত্র সমুহ | কণ্ঠশিল্পী | ||||||||||||||||
আত্মীয় |
|
||||||||||||||||
মৃত্যু (Death) | ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২ (6th February 2022) | |
খ্যাতি লাভঃ
লতা মঙ্গেশকর (মারাঠি) ২৮ সেপ্টেম্বর ১৯২৯ – ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২) ছিলেন ভারতের একজন স্বনামধন্য গায়িকা। তিনি এক হাজারেরও বেশি ভারতীয় ছবিতে গান করেছেন এবং তার গাওয়া মোট গানের সংখ্যা দশ হাজারেরও বেশি। এছাড়া ভারতের ৩৬টি আঞ্চলিক ভাষাতে ও বিদেশি ভাষায় গান গাওয়ার একমাত্র রেকর্ডটি তারই।
১৯৮৯ সালে ভারত সরকার তাকে দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কারে ভূষিত করে। তার অবদানের জন্য ২০০১ সালে তাকে ভারতের সর্বোচ্চ সম্মাননা ভারতরত্নে ভূষিত করা হয়; এম. এস. সুব্বুলক্ষ্মীর পর এই পদক পাওয়া তিনিই দ্বিতীয় সঙ্গীতশিল্পী। ২০০৭ সালে ফ্রান্স সরকার তাকে ফ্রান্সের সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা লেজিওঁ দনরের অফিসার খেতাবে ভূষিত করে।
তিনি ৩টি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, ১৫টি বাংলা চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি পুরস্কার, ৪টি শ্রেষ্ঠ নারী নেপথ্য কণ্ঠশিল্পী বিভাগে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার, ২টি বিশেষ ফিল্মফেয়ার পুরস্কার, ফিল্মফেয়ার আজীবন সম্মাননা পুরস্কারসহ অসংখ্য পুরস্কার অর্জন করেছেন। ১৯৭৪ সালে তিনি প্রথম ভারতীয় হিসেবে রয়্যাল অ্যালবার্ট হলে সঙ্গীত পরিবেশন করেন।
অন্যান্য পুরস্কার ও স্বীকৃতিঃ
মহারাষ্ট্র ভূষণ পুরস্কার (১৯৯৭), এনটিআর জাতীয় পুরস্কার (১৯৯৯), জি সিনে আজীবন সম্মাননা পুরস্কার (১৯৯৯), এএনআর জাতীয় পুরস্কার (২০০৯), শ্রেষ্ঠ নারী নেপথ্য কণ্ঠশিল্পী বিভাগে ৩টি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার এবং ১৫টি বাংলা চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি পুরস্কার পেয়েছেন। তিনি শ্রেষ্ঠ নারী নেপথ্য কণ্ঠশিল্পী বিভাগে ৪টি ফিল্মফেয়ার পুরস্কার অর্জন করেছেন। তিনি ১৯৬৯ সালে নতুন প্রতিভা বিকাশের লক্ষ্যে শ্রেষ্ঠ নারী নেপথ্য কণ্ঠশিল্পী বিভাগে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করেন। পরবর্তী কালে তিনি ১৯৯৩ সালে ফিল্মফেয়ার আজীবন সম্মাননা পুরস্কার এবং ১৯৯৪ ও ২০০৪ সালে দুইবার ফিল্মফেয়ার বিশেষ পুরস্কার অর্জন করেন। ১৯৭৪ সালে সব চেয়ে বেশি সংখ্যক গান রেকর্ড করার জন্য গিনেস বুক অফ রেকর্ডে তাঁর নাম ওঠে। তাঁকে ১৯৮০ সালে দক্ষিণ আমেরিকার সুরিনামের সাম্মানিক নাগরিকত্ব প্রদান করা হয়। ১৯৮৭ সালে আমেরিকার সাম্মানিক নাগরিকত্ব পান। ১৯৯০ সালে পুনে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাঁকে সাম্মনিক ডক্টরেট প্রদান করা হয় । ১৯৯৬ সালে ভিডিওকন স্ক্রিন লাইফটাইম পুরস্কার। ২০০০ সালে আই আই এফ লাইফ টাইম অ্যাচিভমেন্ট পুরস্কার এরকম আরো বহু পুরস্কার ও সম্মানে তিনি ভূষিত।
উল্লেখযোগ্য বাংলা গানঃ
বাংলাতে ২০০টি গান রেকর্ড করেছিলেন। তারমধ্যে কিছু উল্লেখযোগ্য গান -
- আজ নয় গুনগুন গুঞ্জন প্রেমের
- প্রেম একবারই এসেছিল
- রঙ্গিলা বাঁশিতে কে ডাকে
- না যেও না রজনী এখনও
- ওগো আর কিছু তো নাই
- আকাশ প্রদীপ জ্বলে
- একবার বিদায় দে মা
- সাত ভাই চম্পা
- নিঝুম সন্ধ্যায়
- চঞ্চল মন আনমনা হয়
- বাঁশি কেন গায়
- যদিও রজনী পোহাল তবুও
- ও মোর ময়না গো
- কেন কিছু কথা বলো না
- আজ মন চেয়েছে আমি হারিয়ে যাব
- চলে যেতে যেতে দিন বলে যায়
- চঞ্চল ময়ূরী এ রাত
- কে যেন গো ডেকেছে আমায়
- আষাঢ় শ্রাবণ মানে না তো মন
- মঙ্গল দীপ জ্বেলে
উল্লেখযোগ্য হিন্দি গানঃ
তাঁর গলায় পনেরো হাজারেরও বেশি হিন্দি গান রয়েছে। উল্লেখযোগ্য কিছু হিন্দি ছায়াছবির জনপ্রিয় গান -
- আয়েগা আনেওয়ালা (মহল)
- আজা রে পরদেসি (মধুমতী)
- পেয়ার কিয়া তো ডরনা কেয়া (মুঘল-ই-আজম)
- আল্লা তেরো নাম (হম দোনো)
- অ্যায় মেরে ওয়াতন কে লোগো
- লগ যা গলে (ওয়োহ কৌন থি)
- আজ ফির জিনে কি (গাইড)
- রহে না রহে হম (মমতা)
- তু জাঁহা জাঁহা চলেগা (মেরা সায়া)
- হোঁঠো মে অ্যায়সি বাত (জুয়েল থিফ)
- আ জান-এ যা (ইন্তেকাম)
- রয়না বিতি যায়ে (অমর প্রেম)
- তেরে বিনা জিন্দেগি সে কোই (আঁধি)
- চলতে চলতে, ইঁয়ুহি কোই (পাকিজা)
- দুনিয়া করে সওয়াল তো হাম বহু (বেগম)
- অ্যায় দিল এ নাদান রাজিয়া (সুলতান)
- নাম গুম জায়েগা (কিনারা)
- সুন সাহিবা সুন (রাম তেরি গঙ্গা মইলি)
- সিলি হাওয়া ছু গয়ি (লিবাস)
- ইয়ারা সিলি সিলি (লেকিন)
- দিল তো পাগল হ্যায় (দিল তো পাগল হ্যায়)
- তেরে লিয়ে (বীর জারা)
- দিল হুম হুম করে (রুদালি)
- জিয়া জ্বলে (দিল সে)
- তুঝে দেখা তো ইয়ে জানা সনম (ডি ডি এল জে)
লতা মঙ্গেশকর এর মৃত্যু – Lata Mangeshkar's Death :
অবশেষে এই সনামধন্য সুরলা কোকিলা লতা মঙ্গেশকর 92 বছর বয়সে 6 ফেব্রুয়ারি 2022-এ মুম্বাইয়ের ব্রীচ ক্যান্ডি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
কোন মন্তব্য নেই: